সইফ উদ দাহার ছিলেন এদেশের গণমানুষের মুক্তির সংগ্রামে উজ্জ্বল এক ব্যক্তিত্ব। একেবারে কিশোর বয়সেই কংগ্রেসের রাজনীতিতে মোহভঙ্গ ঘটে এবং উদ্বুদ্ধ হন কমিউনিস্ট পার্টির সাম্যবাদী আদর্শে। কলকাতায় ছাত্র অবস্থায় সর্বভারতীয় ছাত্র ফেডারেশনের সাথে যুক্ত হন এবং মাত্র ১৮ বছর বয়সে লাভ করেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ। একেবারে তরুণ বয়স থেকেই সংগঠক হিসেবে কাজ করেন কৃষক ও শ্রমিকদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে। ছিলেন নড়াইলের তে-ভাগা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। পাকিস্তানের নিরাপত্তা আইনে পাঁচ বছর জেল খাটেন। জেল থেকে বেরিয়ে প্রথমে নড়াইলে এবং পরে সামরিক শাসন আমলে খুলনায় আইযুব শাহীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নিযুক্ত হন। একেবারে মাঠ পর্যায় থেকে খুলনার খালিশপুরে ও দৌলতপুরে শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করেন। গঠন করেন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী যুব ফ্রন্ট পাইওনিয়ার যুব লীগ, পরে শ্রমিক কিষাণ কর্মী সংঘ। সংঘের নেতৃত্বে ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান সময়কাল থেকে ’৭০ সাল অব্দি ঘেরাও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১১ মার্চ ’৬৯-এর পিপল্স জুট মিল ঘেরাও-প্রথম ঘেরাও আন্দোলন হিসেবে কথিত। ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দেন এবং নড়াইলের কালিয়া অঞ্চলে সরাসরি যুদ্ধ করেন। ’৭১-এর সেপ্টেম্বরে ভারতে গিয়ে বিভিন্ন বামপন্থী দলসমূহের যৌথ উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ সমন্বয় কমিটি গঠনে নেতৃত্ব দেন। স্বাধীন বাংলাদেশে পুনরায় গ্রেফতার হন, মুক্ত হয়ে নিয়েজিত হন বাংলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলন পুনর্গঠনে। নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন ও
বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন গঠনে।
আজীবন সংগ্রামী সইফ উদ দাহার, যিঁনি সহযোদ্ধা মহলে ডাক্তার দা নামেই সমধিক পরিচিত, কেবল মাঠের একজন সফল সংগঠক ও নেতৃত্বই ছিলেন না, রাজনৈতিক চিন্তা ও তত্ত্ব নির্মাণেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখেছেন। পঞ্চাশের দশকে জেলে থাকতেই তিনি পার্টির বিলোপবাদী ধারার বিরুদ্ধে এবং ১৯৬৯-৭১ সাল পর্যন্ত খুলনা থেকে তাঁর নিজের সম্পাদনায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক সংহতি পত্রিকায় নিয়মিতভাবে বিলোপবাদ, সুবিধাবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ তাত্তি¡ক সংগ্রাম করেন। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে ইংরেজি সাপ্তাহিক হলিডে-তে ধারাবাহিকভাবে লেখেন Robar Capital Run amuck। পরবর্তীতে এটিই বাংলায় বাংলাদেশ ও বিশ্ব অর্থনীতিতে বণিক-পুঁজি নামে প্রকাশিত হয়। নিয়মিত লিখেছেন সংস্কৃতি, নয়া পদধ্বনিসহ অন্যান্য পত্রিকায়।
মার্কসীয় অর্থশাস্ত্র, সমাজতন্ত্র বিনির্মাণের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা, সাম্রাজ্যবাদ, দেশীয় শাসকগোষ্ঠীর চরিত্র নির্ধারণ থেকে শুরু করে তৎকালীন বৈশ্বিক সামরিক ভারসাম্য, শ্রমিকদের মজুরিপ্রশ্ন প্রভৃতি বৈচিত্র্যময় বিষয়ে তিনি লিখেছেন। তুলেছেন গুরুত্বপূর্ণ নানান তাত্ত্বিক প্রশ্ন। বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির লড়াইয়ের ইতিহাস নির্মাণের জন্য যেমন, তেমনি এদেশের প্রগতিশীল রাজনীতির চিন্তার ইতিহাসটিও বুঝতে আগ্রহীদের জন্য এই রচনাগুলোর মূল্য অপরিসীম। সমাজ পরিবর্তনে আগ্রহী প্রত্যেকেরই এই রচনা পাঠ তাই অত্যন্ত জরুরি।
Reviews
There are no reviews yet.