নারীর অধস্তনতা সম্পর্কিত সংস্কারগুলিকে বিজ্ঞানের আবরণে উপস্থাপনের মতাদর্শ আর ধারণাকে মনিরুল ইসলাম খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন তাঁর নারী-পুরুষ বৈষম্যের উৎস : জীবতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব এবং মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান গ্রন্থটিতে।
নারী-পুরুষের জৈবিক গঠনের তারতম্যকে সর্বদাই নারীর অধস্তনতার পক্ষে প্রাকৃতিক যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মধ্যযুগ পর্যন্ত অবরোধ প্রথা নারীর ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল ধর্মরক্ষা, সতীত্বরক্ষা আর নিরাপত্তার দোহাই তুলে; সেই ঘেরাটোপের অনেকটাই অবসান ঘটলেও আজও হীনতর অবস্থানকে যুক্তিযুক্ত করার চেষ্টা করা হয় নানান রকম ছদ্ম-বৈজ্ঞানিক যুক্তি উত্থাপন করে। মস্তিষ্কের আকার, গঠনগত আকৃতি আর বৈশিষ্ট্যকে উপলক্ষ করে নারীর বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্যকে হেয় করা বা তার জন্য বিশেষ ধরনের কতগুলি কাজকে নির্দিষ্ট করাটা কখনো কখনো আধুনিক বা প্রগতিশীল বলে খ্যাত মহলেও দেখা যায়। নারীর সৃজনশীলতা আর শক্তি সম্পর্কে এইসব প্রচলিত ধারণার শেকড় উপড়ে দিয়েছে আলোচ্য গ্রন্থটি। জীবতাত্তি¡ক প্রেক্ষাপটই এর মূল প্রেক্ষিত হলেও আলোচ্য বিষয়টির বিস্তৃতির কারণেই লেখককে একই সাথে নৃবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, রাজনীতি আর সংস্কৃতির পরিসরে বিচরণ করতে হয়েছে। গ্রন্থটি আলোচ্য বিষয়ে বাংলা ভাষায় বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা সমেত একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হিসেবে স্বীকৃত হবে, এমনটাই প্রত্যাশিত।
গ্রন্থটি কেবল নারী মুক্তির আন্দোলনের ক্ষেত্রেই নয়, সাধারণভাবে রাজনীতি, জীবনদর্শন ও নারী-পুরুষ সম্পর্কের রূপান্তর নিয়ে ভাবিত যে কারো জন্য অবশ্যপাঠ্য।
Reviews
There are no reviews yet.