এদেশের কথাসাহিত্যে অনন্য নাম হাসান আজিজুল হক। বিশেষ করে ছোটগল্প রচনায় তাঁর সিদ্ধি সর্বজনজ্ঞাত, সর্বজনস্বীকৃত । আর্নেস্ট হেমিংওয়ে তাঁর প্রিয় লেখক। প্রিয় লেখকের পাঁচটি গল্প অনুবাদ করেছেন তিনি । ঠাঁই পেয়েছে এ বইয়ের পাতায় ।
হেমিংওয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত গল্পের একটি, কিলিমানজারোর বরফপুঞ্জ’ (The Snows of Kilimanjaro) । এই গল্পটি নিয়ে গ্রন্থে সংকলিত গল্প পাঁচটি পরপর এই রকম: ১. ব্রিজের ধারের বৃদ্ধ, ২. একটি পরিচ্ছন্ন আলো ঝকঝকে জায়গা, ৩. কিলিমানজারোর বরফপুঞ্জ, ৪. একটি মহৎ সিংহের উপাখ্যান, ৫. শ্বেতহস্তীর মতো দেখতে পাহাড়গুলো ।
সাহিত্যাঙ্গনে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের (১৮৯৯-১৯৬০) আবির্ভাব প্রথম মহাযুদ্ধের পর। তাঁর অভিজ্ঞতায় মিশেছে স্পেনের গৃহযুদ্ধসমেত একাধিক সমরাঙ্গনে জীবনের আকাক্সক্ষা, অসারতা ও মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করার তাৎক্ষণিক অভিঘাত। এদের মিলিত-মিশ্রিত ছাপ স্থায়ী হয় তাঁর চেতনায়। অনেক অক্ষয় রচনার প্রেক্ষাপট রচনা করে তারা। লেখায় যদিও আবেগ থাকে প্রায়শই অন্তঃশীলা। কাহিনি নির্মাণে শৃঙ্খলা তাঁর প্রবাদতুল্য। ছোট ছোট বাক্যের সামষ্টিক বিন্যাস পাঠক-ভাবনায় জাগিয়ে তোলে অব্যক্তের বিশাল বিস্তার ।
হেমিংয়ের গল্পে ফুটে ওঠা আবেগ-অনুভূতি-যন্ত্রণাকে সযতনে অনুবাদ করেছেন শক্তিমান কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। তবে পড়লে মনে হয়, যেন মূল হেমিংওয়েই পড়ছি। একই রকম কাটা কাটা ছোট ছোট কথা। ভারী শব্দ নেই বললেই চলে। বৈরাগ্য নয়, নির্লিপ্ততা, অসাড় জীবনের শেষপ্রান্তে তুচ্ছ আকিঞ্চন, মাত্র কটি রেখার দাগে প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষের সংযোগের বা সংযোগহীনতার মৌলিক বাস্তবতা অক্ষয় করে তোলা, সম্পূর্ণ নিরলংকার, নিরহংকার, নির্বিকার, তাতেই সামনে দাঁড়ায় যা প্রকৃত, তা-ই, আশা নয়, নৈরাশ্য নয়, সম্যকসমাধি যেন, এসবই যথাযথ ফোটে হাসানের দক্ষ পরিচালনায় তাঁর নিজস্ব ভাষায় ।
Reviews
There are no reviews yet.