সুফিয়া কামালের বইটির নাম একাত্তরের ডায়েরি হলেও তিনি ডায়েরিটি লেখা শুরু করেছিলেন ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে। ফলে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ও সাধারণ নির্বাচনপরবর্তী সময় থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময়গুলো এই ডায়েরির পাতায় পাতায় উঠে এসেছে।
ডায়েরির প্রথম দিকে যদি কোন পাঠকের মনেও হয় বেগম সুফিয়া কামাল পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল, তাহলে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের রোজনামচা পড়ে সেই পাঠকের ভুল তার নিজের কাছেই ধরা পড়বে। মার্চ’৭১ মাসের অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আশুরার প্রচলিত আনুষ্ঠানিকতা পালনের প্রসঙ্গে সুফিয়া কামাল ডায়েরিতে লিখেছিলেন যে দেশে সারা বছরই শহীদ দিবস সেখানে আলাদা শোক দিবসের আনুষ্ঠানিকতার কোন প্রয়োজনীয়তা থাকে না। বাঙালিদের ন্যায্য আন্দোলনের প্রতি পাকিস্তানি শোষকদের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে এ যেন এক শক্তিশালী বিবৃতি!
সুফিয়া কামালের এই ডায়েরিতে তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর অন্তর্দৃষ্টি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের অসহযোগ আন্দোলনকে বিভিন্নভাবে সংগঠিত করার পাশাপাশি তিনি পুরো পরিস্থিতিকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন গভীরভাবে। এজন্যেই তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে ঐ আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের মতামতের চাপে এক প্রকার ‘বন্দি’ হয়ে পড়েছিলেন। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছরের প্রাক্কালে এসে আমরা জানি সে সময় তরুণ ছাত্রনেতাদের এক ধরনের সার্বক্ষণিক চাপ বঙ্গবন্ধুকে সামাল দিতে হচ্ছিলো।
Reviews
There are no reviews yet.