নন্দদুলালদের জন্য জাহীদ ইকবালের গল্প নয়। লুতুপুতু জীবন দেখে যারা অভ্যস্ত, তাদের মনে হতে পারে এসব গল্প অবিশ্বাস্য, গাঁজাখুরি! লেখক যে-জীবন প্রত্যক্ষ করেছেন, বোধ ও উপলব্ধি যে জীবনসমগ্র জাগরুক সেটার সঙ্গে কিঞ্চিত পরিচয়ও না থাকলে পাঠককে হোঁচট খেতে হবে। জীবনের রেখা সরল, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বক্র কিংবা বহুভুজও নয়। অনেকটা খেয়ালী শিল্পীর হিজিবিজি আঁকিবুকির মতোই। একই সময়ে বহমান জীবন ব্যক্তিভেদে ভিন্ন। সূর্য ওঠা-ডোবার সঙ্গে গল্পের চরিত্ররা হাসে-কাঁদে।
কবি যখন গল্প লেখেন, নতুন ব্যঞ্জনায় রঞ্জিত হয় গল্পভ‚গোল। খলবলিয়ে ওঠে বিস্তৃত পরিসর। তিন দশকের লেখালেখি জীবনে জাহীদ ইকবাল নিজ পরিচয় দাঁড় করিয়েছেন শক্ত ভিতের আঙিনায়। এটাই তার প্রথম গল্পগ্রন্থ। বেশ্যাবাড়িকে ‘আনন্দবাড়ি’ নামকরণে একদিকে যেমন জীবন-জিজ্ঞাসার জবাব দিয়েছেন অন্যদিকে মূর্ত করেছেন নর-নারীর রহস্যময় সম্পর্ক, প্রেম-কামের মতো অবগুণ্ঠিত বিষয়। প্রান্তিক মানুষের জীবন কেমন- রেলস্টেশনে, রাস্তায়, কুঁড়েঘরে; কেমন তাদের খিস্তি-ভাষা মুনশিয়ানার সঙ্গে তুলে ধরেছেন লেখক।
দাম্পত্য জীবনের অপ্রাপ্তি, হতাশা, পরনারী, পরস্ত্রী, পরপুরুষের প্রতি মোহ-মায়া মানুষের চিরন্তন। চিরন্তন বিষয়ের চিত্র কুশলী হাতে চিত্রণ করেছেন লেখক। তার রংতুলি বিবর্ণ-ফ্যাকাসের জীবনের কথাই বলে। ‘মৃত মানুষকে খুন করা না করা সমান কথা’ এমন দার্শনিক উক্তিতে লেখক জাত চিনিয়ে দেন।
জীবনের বড় অংশজুড়ে থাকে যৌনতা। কামকলার বিস্তার ও বিকারের শিকার কাছের মানুষরাও। অবদমনের পাশাপাশি বাসনার রংবেরংয়ের কথকতা উঠে এসেছে গল্পরাশিতে। কুশলী শিল্পী জাহীদ ইকবাল গল্পকার পরিচয়েও পৌঁছে যাবেন বহুদূর-আশাবাদটুকু জায়মান রাখি!
-শফিক হাসান
Reviews
There are no reviews yet.