“বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা” সম্পর্কিত বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ বের করাটা অত্যাবশকীয় হয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও মহান অভিঘাত ১৯৭১- আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ যাতে যুক্ত ছিলেন বাংলার আপামর জনগণ। কৃষক-শ্রমিকের অংশগ্রহণ এই যুদ্ধকে জনযুদ্ধে পরিণত করেছিল। অথচ দেশ স্বাধীনের পাঁচ দশক পার হয়ে যাবার পরও এই যুদ্ধের জনযুদ্ধ অবয়বটি অন্তরালেই রয়ে গেল। মীমাংসা হলোনা এখনও সর্বসাধারণের অবদানের বিষয়টি। আমরা নাম জানি শুধু কিছু মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তিয় মুক্তিযোদ্ধাদের। এটা ঐতিহাসিক সত্য যে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বোময় নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। তবে তাদের সাথে আরো যেসব সংগঠন ও নেতৃবর্গ ছিলেন তাদের ভূমিকার কথা আমাদের জানা হয় না। উচ্চারিত হয়না সেই কৃষকের নাম, সেই শ্রমিক পিতাটির নাম যে পরিবার ছেড়ে দেশকে ভালবেসে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের সামনে। স্বাধীনতার জন্য সবার অবদানের কথা ইতিহাসে উঠে আসাটা এখন সময়ের জোরালো দাবি। বিশেষত বামপন্থী অনেকগুলো সংগঠন সে সময় স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের যেসব পরিকল্পনা করেছিলেন এবং যেভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে দেশ পরিচালনার যে নীতি প্রণয়ন করেছিলেন সে সবের বিস্তারিত আলোচনা এই গ্রন্থের প্রধান উপজীব্য ।
নতুন এই সংস্করণে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে বামপন্থীদের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের প্রমাণস্বরূপ আরো তিনটি ঐতিহাসিক দলিল সংযোজন করেছি। সেগুলোর একটি হোল ‘কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ববাংলার সমন্বয় কমিটি’র স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলার কর্মসূচী। এটি ১৯৬৯ সালের এপ্রিলে ঘোষিত হয়েছিল। এই কর্মসূচীতে জনগণতান্ত্রিক শিক্ষা-সংস্কৃতির রূপরেখা ও জনগণতান্ত্রিক অর্থনীতির রূপরেখা কেমন হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এতে স্বাধীন বাংলাদেশের শ্রমনীতি, কৃষিনীতি, পররাষ্ট্রনীতি কি হবে তার যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাবনা ও বিশ্লেষণ আছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য-চিকিৎসা, সামাজিক নিরাপত্তা ও নারীর অধিকার নিয়ে আধুনিক কর্মসূচী উপস্থাপন করা হয়েছে।
Reviews
There are no reviews yet.