যুদ্ধে নারী বীর হয় না। ইতিহাসেও না, চলচ্চিত্রেও না। এটা যুদ্ধ এবং যুদ্ধ-চলচ্চিত্রের ধ্রুপদী রীতি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রাতিষ্ঠানিক ইতিহাস নারীর বহুমাত্রিক অবদানকে স্বীকৃতি দেয়নি বরং তার ওপর নেমে আসা ইতিহাসের সকল নির্যাতনকে তার ‘সম্ভ্রমহানিত্ব’ হিসেবে দলিলবদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রে নারীকে কীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে এই প্রশ্ন থেকে ২৬ টি পূর্ণদৈর্ঘ্য এবং ৭ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রের সেমিওলজি, নারীবাদী চলচ্চিত্র তত্ত্ব, রেপ্রিজেন্টেশন এবং সমালোচনাত্মক তত্ত্বের পাটাতনে দাঁড়িয়ে, ন্যারেটোলজির সাহায্যে। প্রাক-স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী পাঁচটি তরঙ্গে ভাগ করে পাঠ করা এসব চলচ্চিত্রে নারীকে মূলত ধর্ষিত পরিচয়েই দেখা গেছে। এছাড়া অল্প কিছু চলচ্চিত্রে নারীকে শুশ্রূষা প্রদানকারী, যৌনকর্মী কিংবা সহযোগীর ভূমিকায় দেখা গেছে। জাতীয় ইতিহাসের সমান্তরালেই এসব ধর্ষিত নারীকে সম্ভ্রমহীন দেখানো হয়েছে, ধর্ষণদৃশ্যকে বাণিজ্যিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়েছে এবং ধর্ষণ অভিজ্ঞতার ভেতর থেকে যাওয়া এসব নারীকে হয় মরে যে তে হয়েছে, মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যেতে হয়েছে অথবা অদৃশ্য হয়ে যেতে হয়েছে।সাম্প্রতিক প্রবণতা শুরু হয়েছে মূল নারী চরিত্রকে ধর্ষণ অভিজ্ঞতার বাইরে রেখে তার শারীরিক সৌন্দর্যকে ‘দর্শনীয়’ করে মুনাফা নিশ্চিত করা এবং অপ্রধান নারী চরিত্রকে ধর্ষিত দেখিয়ে মেরে ফেলা। প্রথম চলচ্চিত্র ওরা ১১ জন (১৯৭২) থেকে শুরু করে সময় যত গড়িয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান ততই ইতিহাসের আখ্যান থেকে দূরে সরে গেছে। দেশকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করে আক্রান্ত দেশমাতৃকার জন্য যুদ্ধে যাওয়া ‘মাতা-পুত্র’র যুদ্ধ ফ্রেমওয়ার্কে নারী চিত্রায়িত কেবলই যুদ্ধের ‘ক্ষয়ক্ষতি’ হিসেবে। সে মুক্তিযোদ্ধা হয়নি।
Reviews
There are no reviews yet.