বইয়ের ভূমিকা থেকে: ব্রিটিশরা ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে তাদের ভারত সাম্রাজ্য ত্যাগ করে চলে যায়। যাওয়ার আগে তারা ভারতকে দুটি রাষ্ট্রে ভাগ করে। ওই ঐতিহাসিক দেশভাগের অংশ হিসেবে ব্রিটিশ ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত দুটি প্রদেশ বাঙলা ও পাঞ্জাবকে উত্তরাধিকারী রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। বাঙলার প্রায় দুইতৃতীয়াংশ অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তানের একটি প্রদেশ পূর্ব বাঙলা গঠিত হয়। পাকিস্তানের অন্য অংশ থেকে এক হাজার মাইলেরও বেশি দূরত্বে অবস্থিত পূর্ব বাঙলা পরে এর প্রধান অংশীদার থেকে আলাদা হয়ে সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে। প্রাচীন বাঙলার অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ, যার মূল এলাকা পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত, ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে পরিণত হয়।
এই বইয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও স্বাধীন ভারতে দেশভাগের ব্যাপক ফলাফল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর দুই দশকের মধ্যে দেশভাগের প্রভাব ছিল অত্যন্ত জটিল এবং ব্যাপক যা পন্ডিতগণ এ যাবত স্বীকার করেননি; ওই কুড়িটি বছর ছিল ভারতের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ। বাঙলা ও ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে দেশভাগের কারণে অনেক পরিবর্তন হয় যা ছিল অপ্রত্যাশিত ও সুদূরপ্রসারী। এই গবেষণায় ওই পরিবর্তন কেন হয়েছিল তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে দেশভাগের ফলে অনেক নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের সীমান্তও নতুন করে চিহ্নিত হয়েছে। এর ফলে অনেক লোক উচ্ছেদ হয়েছে যা এখনো ভালোভাবে উপলব্ধি করা হয়নি। বাঙলা ভাগের পরিণাম নিয়ে গবেষণায় কুড়ি শতকে সৃষ্ট অনেক নতুন রাষ্ট্র সম্পর্কে আলোচনায় কিছু বিরক্তিকর প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গ কিভাবে তার বিশেষ সীমানা পেয়েছে তা উদ্ঘাটনে এমন ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করা হয় যে, ওইসব নতুন রাষ্ট্রের সীমানা কারো ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল অথবা দুর্ঘটনাজনিত ছিল। দেশভাগের ফলে বাঙলা ও ভারতে যে গভীর পরিবর্তন হয়েছে তা থেকে দেখা যায় যে, নতুন সীমান্ত কিভাবে তাদের রাষ্ট্র-শাসন ব্যবস্থা গঠনে সহায়ক হয়েছে। র্যাডক্লিফ লাইনের বিপরীত দিকে যে সব লক্ষ লক্ষ হিন্দু ও মুসলিম নিজেদেরকে দেখতে পেয়েছিল তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছিল ওই র্যাডক্লিফ লাইন বাঙলাকে ভাগ করে দেয়। বিভক্ত জনগণের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নতুন জাতি রাষ্ট্রগুলিতে ধর্মীয় বা সংখ্যালঘু মানুষের মর্যাদায় নির্বাসিত লোকদের ক্ষেত্রে দেশভাগ কিভাবে ব্যাপক ধ্বংসের কারণ হয় তার একটি হৃদয়গ্রাহী দৃষ্টান্ত হলো বিভক্ত বাঙলা। এ বই তিন ভাগে বিভক্ত, প্রতিটি ভাগেই একটি মূল বক্তব্য আছে: বাঙলার ভাগ যারা দাবি করেছিল তাদের আশা ও সত্যিকার প্রাপ্তির মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান।
Reviews
There are no reviews yet.