বিবাহ জিনিসটা সভ্যসমাজের অন্যান্য সকল ব্যাপারের মতই প্রকৃতির অভিপ্রায়ের সঙ্গে মানুষের অভিপ্রায়ের সন্ধি স্থাপনের ব্যবস্থা। এই দুই অভিপ্রায়ের মধ্যে বিরোধ বেশি অথবা বেশি তাই নিয়েই ভিন্ন ভিন্ন বিবাহের মধ্যে চেহারা ও ভাবের প্রধান পার্থক্য ঘটে। কেন না জীবপ্রকৃতি ও সমাজপ্রকৃতি এই স্বৈরাজ্যের শাসনে মানুষ চালিত। যেখানে সমাজ এই জীবপ্রকৃতির পেয়াদাগুলোকে অত্যন্ত বেশি অমান্য করে চলতে চায় সেখানেই ধৰ্ম্মবিধি, শাসনবিধি আত্মপীড়নবিধি, বিচিত্র ও কঠিন হয়ে উঠতে থাকে। বিশেষত এই দ্বৈরাজ্যে প্রকৃতির হাতেই রসদ, ধনভাণ্ডারের মালিক সেই; এই জন্যে তার অত্যন্ত বিরুদ্ধে যেতে হলে মানুষকে অষ্টপ্রহর আটঘাট বেঁধে উঠে পড়ে লাগতে হয়। এমন অবস্থায় প্রকৃতির চলাচলের গোপন গুলোতে মানুষ নানা সতর্ক পাহারা রেখেও কিছুেেত যেন নিশ্চিষ্ট হতে পারে না। কেন না প্রকৃতির হাতে কেবল যে সিধকাটি আছে তা নয়, সে দেবার নানা উপায় জানে।
যে দেশে সমাজ বহুব্যাপক সম্বন্ধ জালে জটিল, সেদেশে ব্যক্তিগত মানুষের স্বাভাবিক ইচ্ছাকে নানাদিক থেকে দাবিয়ে রাখতে হয়। জীবনধারণের জন্যে যেখানে মানুষকে সর্বদা দূরে। দূরাহরে যেতে বাধ্য করে, সেখানে সমাজ-বন্ধন বহুব্যাপক হয়ে উঠতে পারে না, সেখানে পরস্পরের প্রতি পরস্পরের দাবী সহজেই অপেক্ষাকৃত শিথিল থাকে। যেখানে জীবনযাত্রা সহজ। নয়, যেখানে প্রয়োজন বেশি ও আয়োজন দুঃসাধ্য সেখানে পরস্পরের প্রতি পরস্পরের দাবী স্বীকার সমাজবিধির অন্তর্গত হয় না, তা স্বেচ্ছাধীন হয়ে থাকে। আমাদের দেশে আমরা ছোটোখাটো, সকল প্রকার আনুকূল্যেই কতজ্ঞতা স্বীকারের কোনো বাক্য ব্যবহার করিনে। এই নিয়ে যুরোপীয়েরা আলোচনা করে থাকে। অনেকে তাড়াতাড়ি স্থির করে বসে যে আমাদের স্বভাবেই কৃতজ্ঞতার উপসর্গ নেই। কিন্তু আসল কথা এই যে, আমাদের সমাজের প্রকৃতি এমন যে, এখানে সাহায্য পাওয়ার দায়িত্বের চেয়ে সাহায্য করার দায়িত্ব বেশি। যিনি বিদ্যালাভ করেছেন বিদ্যাদানের দায়িত্ব তাঁরই বিদ্যার্থীর প্রতি তা অনুগ্রহ নয়। অকিঞ্চিন আগন্তুকের প্রতি যথাসাধ্য আতিথ্য করািই গৃহকর্তারই সার্থকতা। জাতকর্ম থেকে আরম্ভ করে অন্ত্যষ্টিসৎকার পর্যন্ত যে সকল অনুষ্ঠান উপলক্ষে ঘরের মধ্যে বাহিরের অধিকার স্বীকার করাকে আমরা বর নির্দেশ বলে জানি, সেই সকল ক্রিয়াকর্যে আমন্ত্রিতদের কাছেই গৃহস্থ আপনা কৃতজ্ঞতা আপন করা কর্তব্য বলে গণ্য করে। –রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
Reviews
There are no reviews yet.